গণমাধ্যমের আদি মাধ্যম সংবাদপত্র। একসময় মানুষের সকাল শুরু হতো পত্রিকা হাতে নিয়ে। নতুন প্রজন্ম ঝুঁকছে অনলাইন গণমাধ্যমে। করোনা মহামারির পর থেকে অনেকটা ঝুঁকিতে পড়েছিল ছাপা পত্রিকা। কিন্তু ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দেশের সংবাদপত্রগুলো মুক্তভাবে লিখতে পারছে। আগের চেয়ে বেশি প্রকাশ হচ্ছে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ। সংবাদপত্রগুলো গণমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তাই ছাপা পত্রিকার কাটতি বাড়ছে। এতে সংবাদপত্রের সুদিন ফেরার আভাস মিলছে।
ছাপা পত্রিকার বর্তমান অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন সিলেট বিভাগীয় সংবাদপত্র এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, প্রবীণ সংবাদপত্রসেবী মো. ইসমাইল হোসেন।
সাড়ে পাঁচ দশকের বেশি সময় সংবাদপত্র বিক্রি ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইসমাইল হোসেন। একসময় নিজে বিক্রি করতেন পত্রিকা। পাঠকের হাতে সরাসরি পত্রিকা তুলে দিতেন। এখন সিলেটে পত্রিকার সর্ববৃহৎ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী। পরিবারের অন্য সদস্যরাও এ পেশায় জড়িয়ে আছেন। এখনো পত্রিকার বান্ডেল নিয়ে ঘোরেন ইসমাইল হোসেন। রাস্তায় পরিচিতজন পেলে পড়ার জন্য তুলে দেন বিভিন্ন পত্রিকার সৌজন্য কপি। দেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলাদেশ প্রতিদিনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা হিসেবে যখন বাংলাদেশ প্রতিদিন বাজারে আসে, তখন থেকেই পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, জনআকাক্সক্ষার বিষয় বেশি গুরুত্ব প্রদান এবং সর্বোপরি পাঠকের চাহিদা প্রাধান্য দেওয়ায় প্রথম থেকেই পত্রিকাটি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। বর্তমানে পত্রিকাটির সার্কুলেশনের ধারেকাছে অন্য কোনো পত্রিকা নেই। সিলেটে যে পত্রিকা আসে পুরোটাই বিক্রি হয়। যেদিন আলোচিত সংবাদ থাকে সেদিন দুপুরের আগেই পত্রিকা শেষ। জাতীয় সংবাদের পাশাপাশি সিলেটের সংবাদকে গুরুত্ব দেওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের প্রিয় পত্রিকায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। সিলেটের মানুষ আঞ্চলিক সংবাদপ্রিয়। তারা পত্রিকায় সিলেটের স্থানীয় সংবাদ বেশি দেখতে চান। তাই পাঠকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সিলেট অঞ্চলের জন্য একটি পাতা বরাদ্দ দিলে সিলেট বিভাগে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাটতি আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসমাইল হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সংবাদের যেমন পাঠকপ্রিয়তা রয়েছে, তেমনি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে উপসম্পাদকীয় লেখার। দেশসেরা লেখকরা এ পত্রিকায় লেখায় তাঁদের নিজস্ব পাঠকশ্রেণিও বাংলাদেশ প্রতিদিন ভালোবাসেন। এছাড়া ফিচার ও ক্রীড়া বিভাগও পাঠক সন্তুষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। স্বকীয়তার কারণে বাংলাদেশ প্রতিদিনের দাম বৃদ্ধি করে ১০ টাকা করা হলেও পাঠক কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। অনলাইন ও ডিজিটাল যুগে ছাপা পত্রিকার ভবিষ্যৎ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসমাইল হোসেন বলেন, করোনা-পরবর্তী কঠিন সময় পার করেছে সংবাদপত্র। করোনার সময় মানুষ বাসাবাড়িতে পত্রিকা রাখত না। লকডাউন প্রত্যাহারের পরও মানুষ কিছুটা পত্রিকাবিমুখ হয়ে অনলাইননির্ভর হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে পাঠকরাও বুঝতে পারে অনলাইন আর ছাপা পত্রিকার সংবাদের মানে অনেক পার্থক্য রয়েছে। ছাপা কাগজ প্রকাশে অধিক দায়িত্বশীল হতে হয়।
মো. ইসমাইল হোসেন : সভাপতি, সিলেট বিভাগীয় সংবাদপত্র এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন