সকাল-বিকাল প্রতিদিন দুই বেলা জমে ওঠে নারায়ণগঞ্জের গোগনগর মন্ডলবাড়ি এলাকার দুধবাজার। যে বাজারে প্রতিদিন প্রায় দুই বেলা মিলিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ দুধ বিক্রি হয়ে থাকে। সে হিসেবে প্রায় প্রতিদিনই প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার দুধ বিক্রি হয়ে থাকে। যা মাসে গিয়ে ৩ থেকে ৪ কোটিতে দাঁড়ায়।
একই সঙ্গে এই দুধের বাজারটিকে কেন্দ্র করে আশপাশ এলাকার কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছে। তারা স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ ভালোভাবেই দিন যাপন করছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো এই দুধের বাজার। বাজারটিকে কেন্দ্র করে আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামে ছোট-বড় পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক খামার গড়ে উঠেছে। যেখানে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৭ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে এই দুধ বাজারে সকাল-বিকাল মিলিয়ে ১৫ হাজার লিটার বিক্রি হয়ে থাকে। বাকিটা খামার থেকে সরাসরি সংগ্রহ করেন ক্রেতারা। ঢাকা-মুন্সিগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি আর খুচরা ক্রেতারা এই বাজার থেকে গরুর খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে থাকেন। বাজারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিক্রেতারা দুধের মান ধরে রেখেছেন। এখানে ২ আনা সেরে দুধ বিক্রি শুরু হয়েছিল এখন ৯০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে এই বাজারে দুধ বিক্রি করতে এসে বিক্রেতাদের কখনো ফেরত যেতে হয়নি।
জামাল নামে এক খামারি বলেন, ‘আমার একটা খামারে ১৫টি গরু রয়েছে। প্রতিদিন সকালে ১০০ লিটার ও বিকালে ৫০ লিটার দুধ বিক্রি করে থাকি। মাঝে মাঝে কমবেশি হয়ে থাকে। এই বাজারে দুধ বিক্রি করে আমি আমার পরিবার নিয়ে বেশ ভালোভাবেই জীবন যাপন করছি।’
বাজারের পাশে চা-বিক্রেতা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমি এখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে দোকানদারি করি। আমি দোকান ধরার আগে থেকেই এখানে দুধ বিক্রি হয়ে আসছে। ২ টাকা থেকে এখানে দুধ বিক্রি শুরু হয়েছিল এখন চলে ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা লিটার।’
গোগনগর ইউনিয়নের লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) শারমীন আক্তার বলেন, ‘এখানে গোগনগর, আলীরটেক, বক্তাবলী ও কাশীপুর এই চারটি ইউনিয়নের খামারিরা দুধ বিক্রি করে থাকেন। গোগনগর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের তিন শতাধিক ডেইরি খামারি রয়েছে। পাশাপাশি আলীরটেক, বক্তাবলী ও কাশীপুর ইউনিয়ন মিলিয়ে আরও কয়েক শতাধিক খামারি রয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইউনুস আলী বলেন, ‘এই বাজারটি অনেক প্রসিদ্ধ বাজার। এই বাজার শুরু হওয়ার পর এটাকে কেন্দ্র করে আশপাশ এলাকায় কয়েক শতাধিক খামার গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে তারা এখানে দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই বাজারের মাধ্যমে।’