ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ঘোষণা করেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা সফল না হয়, তবে তারা মার্কিন টয়লেট পেপার, সয়াবিন, চোখের মেকআপসহ শত শত পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে।
২৭ দেশের এই ইউরোপীয় ব্লকটি সোমবার একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে বেশিরভাগ মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হয়, তাহলে এসব শুল্ক কার্যকর হবে।
এই পাল্টা শুল্ক আরোপ মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে আরোপিত উচ্চহারে শুল্কের জবাবস্বরূপ। ট্রাম্প বিশ্বের বহু বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শুল্ক চাপিয়েছেন, যা বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও ট্রাম্প তার "পাল্টা শুল্ক" পরিকল্পনা কিছুদিনের জন্য স্থগিত করেছেন, ইইউও তাদের পাল্টা ব্যবস্থা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছে। পূর্ব নির্ধারিত ইইউ শুল্ক ব্যবস্থা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫% শুল্কের জবাব।
ইইউর নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রের অযৌক্তিক শুল্কের জবাবে আমাদের পাল্টা ব্যবস্থা আমরা কিছুদিনের জন্য স্থগিত রেখেছি, যাতে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়। তবে আলোচনা সন্তোষজনক না হলে, এই শুল্ক কার্যকর হবে।”
প্রায় ৪০০টি মার্কিন পণ্য ইইউর তালিকায় রয়েছে, যেগুলো জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শুল্কের আওতায় আসতে পারে। প্রায় ১,৩০০টি পণ্য পরে বা একই সময়ে অতিরিক্ত শুল্কের মুখে পড়তে পারে।
এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপে রপ্তানি হওয়া সবচেয়ে বড় পণ্যগুলোর অনেককেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের সরকারি মার্কিন তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপে প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—তেল ও গ্যাস, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী, বিমান ও যন্ত্রাংশ, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এবং মোটরগাড়ি। সয়াবিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কৃষিপণ্য রপ্তানি ইউরোপে, এবং সেটিও তালিকাভুক্ত হয়েছে। মোটরসাইকেল ও সয়াবিন উভয়েই ২৫% শুল্কের হুমকিতে রয়েছে।
ইউরোপে রপ্তানিকৃত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন কৃষিপণ্য যেমন বাদাম (আলমন্ডসহ) ও তাজা ফলও ইইউর পাল্টা শুল্কের তালিকায় রয়েছে।
ইইউর পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর উচ্চহারে শুল্কের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপীয় গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশে ২৫% এবং অন্যান্য সব পণ্যে ২০% “পাল্টা” শুল্ক আরোপ করেছেন, যদিও এই হার ৯০ দিনের জন্য ১০%-এ নামানো হয়েছে। ইইউ এখনো এই শুল্কগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে।
ফ্রান্সের মন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেয়রু মঙ্গলবার বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট একরকম হঠাৎ করেই বিশাল এক বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেছেন—যার পরিণতি এখনই শেষ হওয়ার নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি ঝড়ের মতো।” সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/নাজিম