বগুড়ার কাহালু উপজেলায় ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে যেমন একের পর এক করা হচ্ছে পুকুর তেমনি খননকৃত মাটি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে উপজেলায় কমছে আবাদি জমি, হারাচ্ছে ঊর্বরাশক্তিও। বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও অবৈধভাবে মাটিকাটা এবং বালু তোলা ঠেকানো যাচ্ছে না। জানা যায়, সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন, পুকুর সংস্কারের নামে শত শত ট্রাক মাটি বিক্রি করছেন প্রভাবশালীরা। খননকৃত পুকুরের মাটি এবং নাগর নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন মাটি ব্যবস্থাপনা আইন প্রয়োগ করলেও তা কাজে আসছে না। মামলা ঠুকে দিলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধভাবে মাটি ও বালুর ব্যবসা।
কাহালু উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন সময় এস্কেভেটর মেশিন ও মাটি বহনকারী ট্রাক জব্দ করেছে। একের পর এক আদায় করছে জরিমানাও। তবু চিহ্নিত ব্যক্তিরা এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে তারা এস্কেভেটর দিয়ে কৃষি জমির মাটি খনন করছেন। এসব মাটি বহনকারী ট্রাক-ট্রাক্টরের দাপটে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া নাগর নদী থেকে বালু তোলায় দেখা দিয়েছে ভাঙনের আশঙ্কা। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বীরকেদার, কালাই ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া নাগর নদী থেকে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু তোলা হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৩০টি পয়েন্টে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে কৃষি জমি কেটে খনন করা হচ্ছে পুকুর। এ সব মাটি ও বালু পতিত জমি ভরাট কাজে ব্যবহার হলেও টপ সয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়। জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এ ছাড়া পুকুর সংস্কারের নামে শত শত ট্রাক মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের আরও জোড়ালো হস্তক্ষেপ চান এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করায় আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে খাদ্য উৎপাদন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পরিচালনা করা হয়। তাতেও দুর্বৃত্তদের ঠেকানো যাচ্ছে না। আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কাহালুর ইউএনও কাওছার হাবীব জানান, অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা ও সরঞ্জাম জব্দ করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।