“ও আমার কুকুরের চেয়েও বেশি বাধ্য... যদি আরও কিছু বোকা ছেলে পেতাম!” — এমন সংলাপ নিয়ে চীনের নতুন একটি ভিডিও গেম দেশজুড়ে নারী বিদ্বেষ ও লিঙ্গবৈষম্য বিতর্কে আগুন জ্বেলেছে।
লাইভ-অ্যাকশন ভিডিও গেম Revenge on Gold Diggers-এ খেলোয়াড়রা পুরুষ চরিত্রে থাকেন, যারা প্রেমের ফাঁদে পড়েন একাধিক অর্থলোভী নারীর। প্রতিটি সিদ্ধান্ত গল্পের গতিপথ ঠিক করে।
গেমটি মুক্তির পরপরই স্টিমে বিক্রির শীর্ষে উঠে এলেও সমালোচনার মুখে পড়ে। অনেকে বলছেন, এটি লিঙ্গভিত্তিক নেতিবাচক ধারণা প্রচার করে, আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি প্রেমের নামে প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করে।
তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে গেমটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় Emotional Anti-Fraud Simulator। তবে সমালোচনা থামেনি। গেম পরিচালক, হংকংয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্ক হু-কে চীনের একাধিক সামাজিক মাধ্যম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নির্মাতারা দাবি করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক প্রেম ও আবেগীয় সীমা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা। নারীদের লক্ষ্য করে বৈষম্যমূলক কন্টেন্ট তৈরি করা নয়।
তবে গেম খেলে বিরক্ত হন চিত্রশিল্পী সু ইকুন। তিনি বলেন, “এটা ব্যবসার পুরোনো ফর্মুলা—বিতর্ক তৈরি করো, লাভ কুড়াও।” তাঁর মতে, ‘গোল্ড ডিগার’ শব্দটাই নারী বিদ্বেষী। “কেউ ধনী প্রেমিক পেলেও, সাজলেও, এমনকি পানীয় গ্রহণ করলেও—তাকে ‘গোল্ড ডিগার’ বলা হয়।”
বিতর্কে দ্বিধাবিভক্ত মিডিয়া
হুবেইয়ের এক পত্রিকার ভাষ্য, গেমটি “নারীদের প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করছে।” তবে বেইজিং ডেইলি ইয়ুথ বলছে, প্রেম-ভিত্তিক প্রতারণায় ২০২৩ সালে চীনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৭৯ মিলিয়ন ডলার, তাই এমন গেম প্রয়োজনীয়।
বিতর্ক সত্ত্বেও গেমটির বিক্রি তুঙ্গে। এটি এখন চীনের পিসি গেম প্ল্যাটফর্মে শীর্ষ দশে, এমনকি বিখ্যাত Black Myth: Wukongকেও ছাড়িয়ে গেছে।
২৮ বছর বয়সী এক তরুণ বলেন, “আপনি যদি নিজে গোল্ড ডিগার না হন, তাহলে এই গেমে সমস্যা কোথায়?”
লিঙ্গবৈষম্য আর সামাজিক বাস্তবতা
চীনা সমাজে নারীদের ঘরকেন্দ্রিক ভূমিকা ও পুরুষদের উপার্জনকারী হিসেবে দেখার প্রবণতা প্রবল। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেও বারবার নারীদের “ভালো স্ত্রী ও মা” হওয়ার কথা বলেছেন।
এক নারী বলেন, “এই গেম শুধু পুরুষ-নারী বৈরিতা বাড়ায়। যেন নারীরা পুরুষকে খুশি করেই বাঁচতে বাধ্য।”
তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ
বিডি প্রতিদিন/আশিক