ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করা ইরানের স্বার্থের সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি বলেন, এ বিষয়টি ইরানের আত্মনির্ভরতা ও ‘আমরাও পারি’—এই বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বুধবার তেহরানে এক টেলিভিশন ভাষণে খামেনি বলেন, আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচির মূলে রয়েছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। শত্রুরা ঠিক এখানেই আঘাত হানতে চায়। তারা চায় আমরা আত্মসমর্পণ করি। কিন্তু আমরা তা কখনোই করব না।
সম্প্রতি ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব ইরানকে দিয়েছে। তবে ইরান সেই প্রস্তাবকে ‘১০০ শতাংশ স্বার্থবিরোধী’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। খামেনি বলেন, মার্কিন নেতারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বেয়াদব। তারা বারবার দাবি করছে, আমাদের কোনো পারমাণবিক কর্মসূচি থাকা উচিত নয়। প্রশ্ন হলো, কে আপনাদের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছে?
প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান যেন নিজের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করে এবং যেসব উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, তা বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তেহরান এই দুই শর্তই মেনে নিতে রাজি নয়।
যদিও খামেনি সরাসরি আলোচনার ইতি টানার কথা বলেননি। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এমন শর্তে চুক্তি সম্ভব নয়।
তেহরানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি এমন যে তা আলোচনার উপযোগীই নয়। এতে ওয়াশিংটনের কড়া অবস্থানের পরিবর্তন নেই এবং ইরানের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে এসে আবারও ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি চালু করেছেন। এর অংশ হিসেবে
ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং আলোচনায় ব্যর্থ হলে সামরিক হামলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
এর ফলে ইরান একাধিক সংকটে পড়েছে—বিদ্যুৎ ও পানির ঘাটতি, মুদ্রার দরপতন, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষে মিত্র বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি, এমনকি নিজ দেশে ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কাও বেড়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে সরে গিয়ে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর জবাবে ইরানও সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে এবং বারবার হুমকি দিচ্ছে যে, প্রয়োজনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালানো হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল