ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণই মূল চাবিকাঠি বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, তিনি তেহরানের পক্ষ থেকে দেশটিতে সব ধরণের সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বুধবার দক্ষিণ তেহরানের ইমাম খোমেনির মাজার থেকে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে খামেনি বলেন, আমেরিকার প্রথম কথা হলো ইরানের পারমাণবিক শিল্প থাকা উচিত নয় এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করা উচিত। আমেরিকার প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট। তারা এই বিষয়ে কিছুই করতে পারবে না।
ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতার ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপনে উপলক্ষে ভাষণ দিয়েছেন খামেনি।
ইরানের সাথে পারমাণবিক আলোচনার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কোনও ধরণের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।
মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে মঙ্গলবার বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি ব্যবস্থা প্রস্তাব করছে যা নির্ধারিত সময়ের জন্য ইরানের মাটিতে সীমিত নিম্ন-স্তরের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করার অনুমতি দেবে। এই প্রস্তাবের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি নির্মাণে সহায়তা করবে এবং আঞ্চলিক দেশগুলির একটি কনসোর্টিয়াম সমৃদ্ধকরণ সুবিধা নির্মাণের জন্য আলোচনা করবে। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, একবার ইরান এই প্রতিশ্রুতি থেকে কোনও সুবিধা পেতে শুরু করলে, তাদের দেশে সমস্ত সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পারমাণবিক সমস্যার মূল চাবিকাঠি এবং শত্রুরাও সমৃদ্ধকরণের উপর আঙুল তুলেছে। তিনি আমেরিকার উদ্দেশে বলেছেন, আপনি কেন হস্তক্ষেপ করছেন? ইরান সমৃদ্ধকরণ করুক বা না করুক, আপনার কী আসে যায়? আপনি কে?
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ইরান বড় প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানি চক্র অর্জন করেছে। পারমাণবিক শিল্প একটি মূল শিল্প। অসংখ্য বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র পারমাণবিক শিল্প দ্বারা প্রভাবিত হয়।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে এক মহান বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান, স্থিতিশীল এবং কর্তৃত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থার অধিকারী ইরান পশ্চিমা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। আমাদের বিপ্লবের নেতা একজন মহান ব্যক্তি যার মৃত্যুর ত্রিশ বছর পরেও বিশ্বে উপস্থিতি এখনও স্পষ্ট এবং তার বিপ্লবের প্রভাব বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। বিশ্বে আমেরিকার অবস্থানের তীব্র পতন তার উপস্থিতির কারণে এবং ইহুদিবাদীদের প্রতি ঘৃণা তার বিপ্লবের কারণে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বিশ্বে পশ্চিমা মূল্যবোধের প্রতি বিতৃষ্ণা বিষয়ে বলেন, এর মূলে রয়েছে ইমাম খোমেনির বিপ্লব। ইরানের ইসলামী বিপ্লব পশ্চিমা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। তারা ভাবেনি যে একজনও ধর্মগুরু, সরঞ্জাম ও আর্থিক সম্পদ ছাড়া, একটি জাতিকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। তারা বিশ্বাস করেনি যে এই বিপ্লব এবং এই ইমাম আমেরিকান এবং ইহুদিবাদীদের, যারা বছরের পর বছর ধরে ইরানের সবকিছুতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তাদের নির্মূল করতে সক্ষম হবে এবং দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হবে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ইরান সকল ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা এবং শত্রুতা প্রতিরোধ করেছে।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল