বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আর স্বাধীন দেশে কোরবানির ঈদে ১৯৭৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পায় কালজয়ী ‘রংবাজ’ সিনেমাটি। এ সিনেমার মুখ্য দুই চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক ও কবরী। এটি প্রযোজনা করেন মজিবুর রহমান মজনু এবং পরিচালনায় জহিরুল হক। গণচিত্রের ব্যানারে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমাটির পরিবেশক ছিল নায়করাজ রাজ্জাকের ‘রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন’। ‘রংবাজ’ দিয়েই রাজলক্ষ্মীর যাত্রা শুরু। সিনেমাটির নায়ক-নায়িকা, পরিচালক এবং প্রায় সব শিল্পীই আজ প্রয়াত। প্রযোজক মজনু সিনেমাটির নানাদিকের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, যখন সিনেমাটি নির্মাণ করতে যাই তখন আমার বন্ধু জহিরুল হককে এটি পরিচালনার দায়িত্ব দেই। এটিই তার প্রথম পরিচালিত সিনেমা। তিনি আগে মঞ্চ নাটক নির্মাণ করতেন। ষাটের দশকে তার ‘ধনঞ্জয় বৈষ্ণবীর একমুঠো আকাশ’ নাটকে আমি অভিনয় করেছিলাম। সেই নাটকে রাজ্জাককে অভিনয় করতে এনেছিলেন জহির। সেখান থেকেই রাজ্জাকের সঙ্গে আমার পরিচয়। তখন রাজ্জাককে বলেছিলাম কখনো যদি সিনেমা নির্মাণ করি তাহলে তাতে তাকে নায়ক হিসেবে কাস্ট করব। তাই ‘রংবাজ’ এ রাজ্জাককে নায়ক করে তাকে দেওয়া আমার কথা রেখেছিলাম। এ সিনেমার গল্পে কোনো অ্যাকশন দৃশ্য ছিল না। জসিম তখন আমার কাছে এসে বলেন আমি এতে ফাইট করতে চাই। বিষয়টি নিয়ে রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলি। তিনি বলেন, অসুবিধা নেই, ফাইট সংযোজন করে এ দেশের সিনেমায় নতুন ট্রেন্ড চালু করা যায়। বলা বাহুল্য এটিও জসিমের প্রথম সিনেমা এবং সিনেমায় তার জ্যাম্বস গ্রুপের প্রথম যাত্রা। এভাবেই ‘রংবাজ’ সিনেমাটি ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঠাঁই করে নেয় বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশন ধর্মী সিনেমা হিসেবে। এ সিনেমায় প্রথমবারের মতো খল অভিনেতা বাবরকেও কাস্ট করা হয়। মানে প্রায় ‘অনেক প্রথম’ এর সিনেমা হলো ‘রংবাজ’। তখন প্রায় ১৫/১৬টি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি পায়। আর মুক্তির পর এটি গড়ে অনন্য সাফল্যের ইতিহাস। শুধু সদরঘাটের স্টার সিনেমা হলেই টানা ২৫ সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়ে এটি সিলভার জুবলি পালন করে। সিনেমাটি যেদিন রিলিজ হয় সেদিন এর পরিচালকের ১০৪ ডিগ্রি জ্বর। আমিও অসুস্থ। বাসা থেকে বের হলাম না। আমার বন্ধুরা মর্নিং শো দেখে এসে আমাকে বলেন, আপনি বাসায় বসে আছেন আর আপনার ছবিতো বাজিমাত করেছে। সিনেমা হলে উপচে পড়া দর্শক। আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে জোনাকি হলের সামনে গিয়ে দেখি তিল ধারণের জায়গা নেই। দ্রুত জহিরের বাসায় গিয়ে তাকেও তুলে নিয়ে আসি। এতে আরও অভিনয় করেছিলেন রোজি, আনোয়ার হোসেন, আলতাফ, হাসমত, প্রমুখ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এদের কেউই আজ বেঁচে নেই।
রংবাজ সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেন আনোয়ার পারভেজ। যার মাঝে ‘হৈ হৈ হৈ রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে’ এবং ‘সে যে কেন এলো না কিছু ভালো লাগে না’ গান দুটি তুমুল শ্রোতাপ্রিয় হয়। যা সিনেমাটির মতোই আজও কালজয়ী হয়ে আছে। ‘রংবাজ’ সিনেমার হাত ধরেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সামাজিক অ্যাকশন ধারার এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। ‘রংবাজ’ নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। আর ব্যবসা করেছিল প্রায় ২০ লাখ টাকারও বেশি। মানে তখন বাম্পার হিট ব্যবসা করেছিল ‘রংবাজ’।