এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে একের পর এক বাংলাদেশি আর্চারদের বিদায়ে শঙ্কার কালো মেঘ জমা হচ্ছিল কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখের মনে। তবে কি হতাশাই সঙ্গী হবে? গতকাল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের শঙ্কার সেই কালো মেঘ দূর করে দিলেন বন্যা আক্তার ও হিমু বাছাড়। কম্পাউন্ড মিশ্র ইভেন্টে ফাইনাল নিশ্চিত করেছেন দুজন। এর অর্থ হলো, বাংলাদেশের পদক নিশ্চিত। অন্তত রূপা তো বটেই। সোনার পদকও হতে পারে। আজ আর্মি স্টেডিয়ামে সোনার পদক জয়ের লক্ষ্যেই ভারতীয় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবেন বন্যা-হিমু।
বন্যা আক্তার ফরিদপুরের মেয়ে। ২০১৪ সালে আর্চারিতে নাম লেখান তিনি। এরপর থেকেই এ খেলায় নিজের সব মনোযোগ ঢেলে দেন। ২০১৬ সালের শেষদিকে জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। তখন তিনি বাংলাদেশ আনসারের সদস্য ছিলেন। ২০২৪ সালে যোগ দেন বিমান বাহিনীতে। ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলেই রৌপ্য পদক জয় করেন বন্যা। এরপর থেকেই বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন। এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জেতার পর, লক্ষ্য অলিম্পিকে খেলা।
সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা। বন্যার সতীর্থ হিমু বাছাড় গোপালগঞ্জ থেকে ওঠে এসেছেন। বড় ভাইয়ের প্রেরণায় খেলাচ্ছলেই যোগ দিয়েছিলেন আর্চারিতে। এরপর এ খেলাই হয়ে ওঠে তার ধ্যান-জ্ঞান। বন্যার সঙ্গে জুটি বেঁধে তীর এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা প্রাপ্তির সম্ভাবনা জাগিয়েছেন হিমু বাছাড়। কম্পাউন্ড মিশ্র ইভেন্টের ফাইনালে ওঠার পথে গতকাল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার জুটিকে ১৫৮-১৫৩ ব্যবধানে পরাজিত করেন তারা। চার সেটেই বিশ্বসেরা কোরিয়ানদের পরাজিত করেন বন্যা-হিমু। এর আগে ভুটানকে ১৫৪-১৪৮ স্কোরে হারিয়ে এ ইভেন্টের এলিমিনেশন রাউন্ড শুরু করে বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইরানের। সেখানে ১৫৪-১৫৪ সমতার পর টাইব্রেকারে ১৯-১৮ ব্যবধানে শ্বাসরুদ্ধকর জয় তুলে নেন বন্যা-হিমু। আজ সোনার পদকের লড়াইয়ে ভারতের দীপশিখা-অভিষেক জুটির মুখোমুখি হবেন তারা। এ ম্যাচে পরাজিত হলেও রূপার পদক গলায় ঝুলাবেন বন্যা-হিমু। তবে সোনার পদকই জয় করতে চান তারা।
বন্যা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এ পর্যন্ত তেমন কোনো ভালো ফল হয়নি। আশা করি, এবার হবে। সবশেষ ২০২৪ সালে ভুটানে ব্যাক্তিগত ইভেন্টে রুপা পেয়েছিলাম। জাতীয় দলে নয় বছর ধরে আছি। আশা করি, এবার ভালো কিছু হবে।’ হিমু বাছাড় বলেন, ‘ফাইনালে উঠেছি, এটা আমাদের দুজনের জন্যই আনন্দের। এর আগে আমরা তিন থেকে চারটা আন্তর্জাতিক ইভেন্ট খেলেছি একসঙ্গে, কিন্তু কোনো পদক ছিল না। এই প্রথম আমরা ফাইনালে উঠলাম। ভালো করার লক্ষ্য আমাদের। সবসময় চেষ্টা ছিল দেশের জন্য কিছু করার।’ দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দলকে সেমিফাইনালে পরাজিত করে দুজনেই বেশ আত্মবিশ্বাসী। এবার ভারতকেও পরাজিত করতে চান তারা।