নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির হাবল স্পেস টেলিস্কোপ সম্প্রতি ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে সিটাস নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত বৃহৎ গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ‘আবেল ২০৯’-এর এক বিস্ময়কর ছবি প্রকাশ করেছে। এই গ্যালাক্সি ক্লাস্টারটি ১০০টিরও বেশি গ্যালাক্সি নিয়ে গঠিত এবং এদের একত্রে ধরে রেখেছে মহাকর্ষীয় শক্তি।
তবে দৃশ্যমান অংশই পুরো চিত্র নয়। গ্যালাক্সিগুলোর আড়ালে রয়েছে এক জটিল অদৃশ্য কাঠামো—গরম গ্যাস ও ‘ডার্ক ম্যাটার’ (অদৃশ্য পদার্থ)। এগুলো চোখে দেখা না গেলেও মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে মহাবিশ্বের গঠন নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হাবলের উন্নত ক্যামেরা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার কারণে এই অদৃশ্য উপাদানগুলোর উপস্থিতি বুঝতে পারছেন বিজ্ঞানীরা।
হাবলের ‘অ্যাডভান্সড ক্যামেরা ফর সার্ভে’ ও ‘ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা থ্রি’-তে তোলা ১২টি ভিন্ন রঙের এক্সপোজার একত্র করে তৈরি করা হয় এই চিত্র। এতে দেখা যায়, কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি উজ্জ্বল ও ডিম্বাকার স্বর্ণালী গ্যালাক্সি এবং প্রান্তে কিছু হালকা নীল রঙের সর্পিল গ্যালাক্সি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন ছবি থেকে ‘ডার্ক ম্যাটার’ ও ‘ডার্ক এনার্জি’ (অদৃশ্য শক্তি)-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সম্ভব। আবেল ২০৯-এর গ্যালাক্সিগুলোর মাঝের স্থান মূলত গরম গ্যাস ও ডার্ক ম্যাটার দ্বারা পূর্ণ। সমগ্র মহাবিশ্বের মধ্যে আমরা যা দেখতে পাই, তা মোট ভরের মাত্র ৫ শতাংশ; বাকি ২৫ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার এবং ৭০ শতাংশ ডার্ক এনার্জি দ্বারা গঠিত।
এই ধরনের গ্যালাক্সি ক্লাস্টার প্রাকৃতিক লেন্সের মতো কাজ করে। এর শক্তিশালী মহাকর্ষীয় আকর্ষণ দূরবর্তী গ্যালাক্সির আলো বাঁকা করে দেয়, যাকে বলে ‘গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং’। ছবিতে পেছনের কিছু গ্যালাক্সিকে বাঁকানো রেখা বা ধোঁয়ার মতো দেখা যায়। এই বিকৃতিগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ ক্লাস্টারের ভর নির্ণয় করতে পারেন, যার মধ্যে অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটারও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মহাবিশ্ব কীভাবে সময়ের সঙ্গে গড়ে উঠেছে—তা বোঝার চেষ্টা করছেন গবেষকেরা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল