জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে ১৩তম দিনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন সিআইডির দুই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৯ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন– বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথমে সাক্ষ্য দেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ রোকনুজ্জামান। তিনি পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। পরে জবানবন্দি দেন একই সংস্থার ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের উপপরিদর্শক শাহেদ জোবায়ের লরেন্স। সাক্ষ্যে এ মামলায় উদ্ধার করা আলামত যাচাই-বাছাইয়ের বর্ণনা দেন তারা। পরে তাদের জেরা করেন পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ও গ্রেফতারদের আইনজীবীরা। এখন পর্যন্ত এ মামলায় মোট ২২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ।
এর আগে গত ২৬ অক্টোবর ২০ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আবদুস সালাম। গত বছরের ৫ আগস্ট তার সামনেই চানখারপুলে হত্যাযজ্ঞ চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিজের মোবাইলে সেসব দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন তিনি। ১৬ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো এ মামলায় অবশিষ্ট সাক্ষ্য দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। ৯ অক্টোবর তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
১৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে নিজের সাক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পুরো পটভূমি তুলে ধরেন আসিফ মাহমুদ। একইসঙ্গে গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে চালানো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ দেন। এমনকি ডিবি পরিচয়ে রাতের আঁধারে নিজেকে গুম করার কথাও জবানবন্দিতে পেশ করেন তিনি। এসব ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরাসরি জড়িতদের দায়ী করেন এই উপদেষ্টা।
এ মামলার গ্রেফতার চার আসামি হলেন– শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক আসামিরা হলেন– সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
গত ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন