পুলিশের সব থানায় মামলার তদন্তে গতি আনতে আলাদা টিম গঠন করা হচ্ছে। থানায় কর্তব্যরত পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হবেন এ টিমের প্রধান। থানার গুরুত্ব বুঝে পাঁচ থেকে ১২ জন এসআইয়ের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হবে। থানায় এ টিমের সদস্যরা তিন থেকে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এ সময়ে সফলতার সঙ্গে কাজ করলে তাঁদের পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সংস্থা সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হবে। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থানায় পুলিশের ব্যবস্থাপনা আলাদা দুটি ভাগে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এটি বাস্তবায়ন হলে মামলার তদন্তের জন্য থাকবে পৃথক টিম। আর জনশৃঙ্খলা ও আভিযানিক কর্মকাণ্ডে থাকবে আলাদা টিম। যাঁরা মামলার তদন্তে যুক্ত থাকবেন, তাঁরা জনশৃঙ্খলা ও আভিযানিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন না। আর যেসব কর্মকর্তা জনশৃঙ্খলা ও আভিযানিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকবেন, তাঁদের কোনো মামলার তদন্তের এখতিয়ার থাকবে না। প্রস্তাবিত এ পদ্ধতি নিয়ে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলা দায়ের, তদন্ত, সাধারণ ডায়েরি (জিডি), পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলসহ নানা কেন্দ্রিক দুর্নীতি ও অনিয়ম থানায় হয়ে থাকে। পুলিশ পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে আশানুরূপ সেবা পাবে সাধারণ মানুষ। ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য আলাদা দল গঠন করতে হবে। থানা ছাড়া অন্যত্র তাঁদের বদলি করা যাবে না। ভবিষ্যতে মামলা পরিচালনায় যুক্ত একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের অধীনে যুক্ত থাকবে। থানায় কোনো মামলা হলে তার তদন্তের দায়িত্ব তদন্ত টিমের কাছে চলে যাবে। তারাই এটি দেখভাল করবে। মামলায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করবে। যাঁরা ১৩ বছর তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তাঁরা পরবর্তী সময়ে পরিদর্শক হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
সূত্র বলছেন, সারা দেশে থানা রয়েছে ৬৩৯টি। পুলিশের অন্তত ২০ হাজার এসআই (নিরস্ত্র) এবং ৫ হাজার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদমর্যাদার তদন্ত কর্মকর্তা আছেন। তাঁরা ফৌজদারি অপরাধের কোনো মামলার তদন্ত, আলামত সংগ্রহ, অপরাধী গ্রেপ্তার, মালপত্র উদ্ধার, আসামি হেফাজতে নেওয়া, আদালতে সোপর্দ, রিমান্ড চাওয়া, প্রতিবেদন দাখিলসহ তদন্তসংশ্লিষ্ট নানান কাজে যুক্ত। এ ছাড়া অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশে রয়েছে সাইবার ফরেনসিক ল্যাব, কেমিক্যাল ল্যাব, আইটি ল্যাব, হস্তলেখা ও হস্তরেখাবিশারদ। বিভিন্ন ল্যাবে নতুন উপায়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছে পুলিশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘প্রতিটি থানায় মামলার তদন্তে গতি আনতে টিম গঠন করা হচ্ছে। এতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। ফলে তদন্তের মান বাড়বে। প্রকৃত আসামিরা ধরা পড়বে, পাশাপাশি ভুক্তভোগীও দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন।’