'সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মাগরিবের নামাজ পড়ি। তারপর সারারাত আমরা অন্ধকারে থাকি। টর্চের আলো পেলে রাতের খাবার খাই। যদি না থাকে, রাতের খাবার বা আলো ছাড়াই দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমাতে যাই।'-- এভাবেই নিজেদের অবস্থা বর্ণনা করছিলেন ৩১ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি মা হানান আল-জুজু।
তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তার পরিবার বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ফিলিস্তিনি ছিটমহলের দক্ষিণে রাফাহ শহরে প্রথম বাস্তুচ্যুত হওয়ার সময় মোমবাতির ওপর তাদের নির্ভর করতে হতো।
কিন্তু তাঁবুতে আগুন লাগার শঙ্কায়, তারা তাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। জুজু বলেন, আমরা একটি এলইডি লাইট সংগ্রহ করেছিলাম, কিন্তু এটি ভেঙে গেছে। মেরামত করার জন্যও আমাদের কাছে টাকা নেই। একটি ব্যাটারি কেনারও চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের পক্ষে ব্যাটারির দাম মেটানো সম্ভব নয়।
গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধের আগে গাজার বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি অংশ আমদানি করা হতো ইসরায়েল থেকে। দেশটি থেকে আসতো ১২০ মেগাওয়াট এবং ছিটমহলের একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে আসতো আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
২০২৩ সালের ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েল গাজাকে সম্পূর্ণ অবরোধ করে। কয়েকদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়।
গাজার বিদ্যুৎ কোম্পানির মিডিয়া ডিরেক্টর মোহাম্মদ থাবেত জানিয়েছেন, যুদ্ধের কারণে ছিটমহলের ৮০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে, অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির ক্ষতির হয়েছে ৭২৮ মিলিয়ন ডলার।
গত দুই বছর ধরে গাজা উপত্যকায় কোনও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু ছিল না। মোহাম্মদ থাবেত বলেন, যুদ্ধের আগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬০০ মেগাওয়াট।
চলতি বছরের মার্চ মাসে, ইসরায়েলি মন্ত্রী এলি কোহেন জানান, হামাসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গাজায় বিদ্যুৎ না পাঠাতে ইলেকট্রিক কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে ব্যাপক অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন।
সূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স
বিডি-প্রতিদিন/এমই