যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার মুখে গেরিলা ধাঁচের প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে পুরনো রুশ অস্ত্র-সরঞ্জাম মোতায়েন করতে শুরু করেছে নিকোলাস মাদুরোর দেশ।
পাশাপাশি আকাশ ও স্থল হামলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের কৌশল গ্রহণের চিন্তা করছে দেশটির সেনাবাহিনী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান চালাতে পারে তার দেশ। যদিও পরে তিনি এই কথা অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেন, ট্রাম্প তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি যেকোনও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার দেশ ও সেনাবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
সূত্রগুলোর দাবি, বর্তমানে প্রশিক্ষণের অভাব, স্বল্প বেতন এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী। অনেক ইউনিটকে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদকদের সঙ্গে চুক্তি করে সৈন্যদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়।
সূত্রের দাবি, এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় দুটি বিকল্প কৌশল রয়েছে মাদুরো সরকারের। প্রথমটি হলো দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ। যা মূলত গেরিলা যুদ্ধকৌশল। দেশজুড়ে ২৮০টির বেশি ছোট ছোট ইউনিট মোতায়েন করা হবে। যাদেরকে দিয়ে হামলা ও ধ্বংসাত্মক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় কৌশলটি হলো অরাজকতা সৃষ্টি করা। যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র সমর্থকদের মাধ্যমে রাজধানী কারাকাসসহ বড় শহরগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশকে বিদেশি বাহিনীর জন্য অচল করে তোলা হবে।
সূত্রের তথ্যানুযায়ী, ভেনেজুয়েলার একজন সাধারণ সৈন্যের মাসিক আয় প্রায় মাত্র ১০০ মার্কিন ডলার। যা নূন্যতম খাদ্য চাহিদা পূরণে ব্যয়ের অর্ধেকও নয়। ফলে হামলা হলে সেনাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরির শঙ্কা রয়েছে।
মাদুরো দাবি করেছেন, দেশের ৮০ লাখ বেসামরিক নাগরিক মিলিশিয়া প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তবে প্রতিরক্ষা সূত্রের ধারণা, প্রকৃতপক্ষে সক্রিয়ভাবে লড়াইয়ে অংশ নিতে পারে মাত্র ৫ থেকে ৭ হাজার লোক।
ভেনেজুয়েলার অস্ত্রভাণ্ডারের বড় অংশই সোভিয়েত যুগের পুরনো রুশ অস্ত্র। ২০০০ সালের দিকে কেনা ২০টি সুখোই যুদ্ধবিমান এখন অচলপ্রায়। একইভাবে হেলিকপ্টার, ট্যাংক ও আইগলা ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমও পুরনো। তবু মাদুরো দাবি করেছেন, দেশের ৫০০০ আইগলা ক্ষেপণাস্ত্র এখন সর্বত্র মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার অনুরোধে সহায়তা দিতে তারা প্রস্তুত। তবে উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
বিশ্লেষক আন্দ্রেই সারবিন পন্টের মতে, মাদুরোর এই প্রস্তুতির উদ্দেশ্য আসল সামরিক শক্তি প্রদর্শন নয় বরং বার্তা দেওয়া যে, যুক্তরাষ্ট্র হামলা করলে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। তার ভাষায়, এটি মূলত এক ধরনের প্রতিরোধ কৌশল। সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/একেএ