রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরো করা মরদেহ ঢাকার হাইকোর্ট এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। বৃহস্পতিবার রাজধানী থেকে তার খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরিবার জানায়, বন্ধু জরেজুলের জাপান যাওয়ার জন্য ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এ টাকা লেনদেনের জন্য গত মঙ্গলবার দুইজন একসঙ্গে ঢাকায় গিয়েছিলেন। বুধবার স্ত্রী লাকীর সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা বলেন আশরাফুল। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়।
পরিবারের অন্যতম উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। আশরাফুলকে ২৬ টুকরো করে নিমর্ম হত্যার কথা বারবার স্মরণ করে ডুকরে কাঁদছেন স্বজনরা।গ্রামবাসি ও স্বজনরা আশরাফুলের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন।
স্থানীয় ও পারিবার সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদের একমাত ছেলে আশরাফুল হক কাঁচামাল আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করতেন। তার বন্ধু জরেজুল সদর উপজেলার শ্যামপুরের বাসিন্দা ও তিনি দীর্ঘদিন মালেশিয়ায় ছিলেন। মাস দেড়েক আগে দেশের ফেরার পর আশরাফুলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় জরেজের। আশরাফুলের সকল ব্যবসা-বাণিজ্য, হিসাব-নিকাশ রাখতেন জুরেজুল। জাপান যাওয়ার জন্য জরেজুল ৩০ লাখ টাকা চান আশরাফুলের কাছে। স্বজনদের দাবি ওই টাকা দেয়ার জন্য জরেজুলের সঙ্গে ঢাকায় যান আশরাপুল। ওই টাকা বাদেও আশাফুলের কাছে আরোও টাকা ছিল বলে ধারনা করছে পরিবার।
গত মঙ্গলবার আশরাফুল হক বন্ধু জুরেজসহ ঢাকায় যান। বুধবার বিকেলে আশরাফুলের সাথে স্ত্রী লাকী বেগমের শেষ কথা হয়। সেসময় আশরাফুলের স্ত্রীকে বলেন ব্যস্ত আছি, পরে ফোন দিব। এর পরে আর ফোন দেওয়া হয়নি আশরাফুলের। পরিবার জানায় আশরাফুল দুটি ফোন ব্যবহার করত। যে ফোনে সব সময় কথা হত সেই ফোনে স্ত্রী ফোন দিলে সেই ফোন রিসিভ করে জরেজুল। এ সময় জজরেজুল অসংলগ্ন ভাবে কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বদরগঞ্জ থানায় জিডি করতে আসেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে এসে জানতে পারেন আশরাফুল হককে ঢাকায় নৃশংসভাবে হত্যাকরা হয়েছে। তার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আশরাফুল হকের শ্যালক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বুধবার বিকেলে আমার বোনের সাথে আশরাফুলের কথা হয়। তখন তিনি বলেছিল, বাবা হাসপাতালে আছে, তাকে রিলিজ দেবে, টাকা পরিশোধ করে দিছি। বাবাকে নিয়া আইসো। আমি ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবে।এরপর আশরাফুলের সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আশরাফুলকে কল করলে তার বন্ধু জরেজ ধরে বলে আশরাফুল ব্যস্ত আছে, কালেকশনে গেছে ‘
আশরাফুলের অপর শ্যালক রেজোয়ান হোসেন বলেন, ‘আমার দুলাভাই ঢাকা যাওয়ার আগে হিমাগার থেকে ৬০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছিলেন। আলু বিক্রির প্রায় ৩০ লাখ টাকা তার কাছে ছিল। জরেজুল জাপান যাওয়ার জন্য আমার দুলাভাইয়ের কাছে টাকা চেয়েছিলেন। যেহেতু দুলাভাইয়ের মোবাইল ফোন তার কাছে পাওয়া গেছে, তাই সে টাকার জন্য এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।’
আশরাফুলের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, ‘জরেজুল মালেশিয়া থেকে আসার পর সবসময় আমার স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। তিনি স্বামীর ব্যবসার সকল তথ্য জানতেন। টাকার জন্য আমার স্বামীকে এমন নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।’
এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে নিহত আশরাফুল হকের বোন আনজিনা বেগম বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নিহত আশরাফুলের বন্ধু জরেজকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘পরিবারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা ঢাকার ওসি শাহবাগ ও ডিসি রমনাকে সরবরাহ করেছি। তারা এ সব তথ্য নিয়ে কাজ করছেন। পরিবার জানিয়েছে বন্ধু জরেজই আশরাফুলকে হত্যা করেছে। নিহতের পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় মামলা করেছেন।’
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক